অনিয়ম দূর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিবন্ধন পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য বহিরাগত এসব অদক্ষ শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন সমাবেশে উপস্থিত বক্তারা।
এ নিয়ে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকার সচেতন মহল। গত বছরের ২৩ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কুল কলেজ মাদ্রাসাসহ হবিগঞ্জের ৪৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই এসব প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে হবিগঞ্জ দারুছুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ফারুক মিয়ার নেতৃত্বে নিয়োগ বাণিজ্যের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ২০০৫ সালের ২০ মার্চ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নিবন্ধন নীতিমালা চালু করার পর থেকে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বা এমপিও ইনডেক্স ছাড়া শিক্ষক পদে নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। নিবন্ধন নীতিমালার ফাঁকফোকড়ে প্রিন্সিপাল ফারুক মিয়ার নেতৃত্বে ওই সিন্ডিকেট ভুয়া বিজ্ঞপ্তি, সীল স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া ইন্টারভিউ বোর্ড দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোকদেরকে ২০০৫ সালের নিবন্ধন আইনের আগের নীতিমালায় এমপিওভুক্ত করার পায়তারা করে আসছে। এমপিওভুক্তির প্রথম মাসেই এড়িয়া বিল সহ এককালীন ২-৩ লাখ টাকা পাবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে ওই সিন্ডিকেট প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা আদায় করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। বিনা বেতনে শ্রম দেয়া প্রতিষ্ঠাকালীন যেসব শিক্ষক তাদের চাহিদামত টাকা দিতে পারেননি এমপিওভুক্তির প্রেরিত আবেদনের স্টাফ প্যাটার্নে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বঞ্চিত শিক্ষকদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপপরিচালকের বরাবরের লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বঞ্চিত শিক্ষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিসমিল্লাহতেই গলদ। যে সালের যে তারিখে যে পত্রিকায় এমপিও আবেদনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিস থেকে ওই সালের উল্লেখিত তারিখের আসল পত্রিকা সংগ্রহ করে দেখা যায় ওই পত্রিকায় এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ই নেই। সদরের চাঁন্দপুর দারুছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার ১৭ অক্টোবর ২০০৪, শরীফাবাদ দাখিল মাদ্রাসার ২ জুন ২০১৪ এবং নূরে মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখের এমপিওভুক্তির আবেদনে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখানো হয়েছে। ইনকিলাব পত্রিকা অফিস থেকে উল্লেখিত তারিখের পত্রিকা সংগ্রহ করে দেখা যায় তাদের বিজ্ঞপ্তির কোনো অস্থিত্ব নেই। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পত্রিকার কপি রাখেন এবং তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে এ প্রতিনিধিকে আস্বাস দেন। ইন্টারভিউ বোর্ডের রেজাল্ট শীটে যাদের সীল স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে এসব স্বাক্ষর তাদের নয় এবং সবকিছুই জালিয়াতি বলে তারা জানান। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী মৌলভী ১০ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর সহকারী সুপার পদে এবং তিনবছরের সহকারী সুপারের অভিজ্ঞতার পর সুপার পদে আবেদন করার নিয়ম থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোনো প্রকার অভিজ্ঞতা ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কেউ কেউ সুপারের পদ ভাগিয়ে নিচ্ছেন। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়। চুনারুঘাটের হাজী জোবায়দা দাখিল মাদ্রাসার সুপার তোফাজ্জল হক আনসারী বর্তমানে হাফিজপুর মহিলা মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী, সদরের নূরে মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার বদরুর রেজা বর্তমানে দিনারপুর মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী, একই মাদ্রাসার সহ সুপার জাহাঙ্গীর বর্তমানে চাটপাড়া মাদ্রাসার ইনডেক্সধারী সহকারী মৌলভী হিসেবে গত মাসেও বেতন উত্তোলন করেছেন।