স্টাফ রিপোর্টার :- হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের কাজীর সহকারীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতি ও প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। চুনারুঘাট উপজেলার ৭ নং উবাহাটা ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্টার (কাজীর) দ্বায়িত্বে আছেন হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মুখলিছুর রহমান। জেলা জামাতের শীর্ষ নেতা হওয়ায় দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকার কারণে মাঠপর্যায়ে কাবিন লেখার মুহুরির দায়িত্ব দিয়েছেন জামাতের আরেক নেতা কাছিশাইল গ্রামের (ঘর জামাতা) আহমদুর রহমান ভূঁইয়াকে। কাজীর মুহুরি হয়েও আহমদুর রহমান ভূঁইয়া নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে কাবিন রেজিষ্ট্রি, কাবিন বাতিল, ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি করে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি, স্কুল কলেজ পড়ুয়া প্রেমিক জুটিকে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে ছাড়াই নিকাহ্ রেজিষ্টার বালামে বর কনের স্বাক্ষর নিয়ে কাবিন হয়ে গেছে অজুহাত দেখিয়ে সেই কাবিন বাতিল করার নামে প্রেমিক জুটির উভয় পরিবারকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কাজীর সহকারী আহমদুর রহমান ভূঁইয়া বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রি ও বাতিলের নাটক সাজিয়ে অভিনব কৌশলে গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে প্রকাশ্যে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও ছেলে ও মেয়ে ঘটিত ব্যাপার হওয়ায় মান সম্মানের ভয়ে কেউ কাজী ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। আহমদুর রহমান ভূঁইয়ার টার্গেট থাকে স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় পড়ুয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক বর কনে। অভিভাবকদের সম্মতিতে যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হয় তাহলে কম্পিউটার দিয়ে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করে প্রাপ্ত বয়স্ক দেখানোর অজুহাতে প্রতিটি কাবিন ও ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি বাবদ কাজীর মুহুরি আহমদুর রহমান ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। অবিভাবকের গোপনে স্কুল কলেজ পড়ুয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রেমিক জুটিকে ” আগে কাবিন করলে পরে অভিভাবক মেনে নিয়ে বিয়ে করাতে বাধ্য হবে ” এই প্রলোভন দেখিয়ে কাবিন রেজিষ্ট্রির বালামে বর কনের স্বাক্ষর নিয়ে বেশ কয়েকটি পরিবারকে ব্ল্যাক মেইলিং করে কাবিন বাতিলের নামে মুক্তিপণ আদায়ের মত মোটা অংকের চাদা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরাও কাজীর মুহুরি আহমদুর রহমান ভূঁইয়ার কাবিন বাণিজ্য থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমনই একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিন তদন্ত করে দেখা যায়, গত মাসের ২৪ তারিখ কাজীর সহকারী আহমদুর রহমান ভূঁইয়া ৭ নং উবাহাটা ইউনিয়নের শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এলাকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান নামের এক যুবককে মোবাইলে সুন্দরী একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে ওই মেয়ের সাথে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কাবিন রেজিষ্ট্রির বালামে বরের জায়গায় আব্দুর রহমানের স্বাক্ষর নেন। পরদিনই অভিযুক্ত আহমদুর রহমান ভূঁইয়া ভিকটিম আব্দুর রহমানের অভিভাবককে জানান “আপনার ছেলের কাবিন রেজিষ্ট্রি হয়ে গেছে “। বিয়ে কোথায় হয়েছে ছেলে মেয়ের পক্ষে কে ছিল জানতে চাইলে তিনি জানান বিয়ে হয়নি শুধু কাবিন রেজিষ্ট্রি হয়েছে “। ইসলামি শরিয়তে ও প্রচলিত আইনে স্বাক্ষীদের সামনে আগে বিয়ে পড়ানো হবে পরে বর কনে সহ উপস্থিত বর কনের অভিভাবকরা স্বাক্ষী দেয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কাজীর সহকারী আহমদুর রহমান ভূঁইয়া আগে কৌশলে কাবিনের বালামে ছেলে বা মেয়ের স্বাক্ষর নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে উভয় পরিবারকে জিম্মি করেন। (এ প্রতিবদকের হাতে অডিও রেকর্ড বাল্য বিবাহ ও টাকা আদায়ের বেশকিছু ডকুমেন্টস আছে)। পরে আব্দুর রহমানের পরিবার কনের পরিচয় ও কাবিনের কপি চাইলে কাজীর সহকারী আহমদুর রহমান ভূঁইয়া কনের জন্ম নিবন্ধনের কপি ও কাবিনের একটি রশিদ দেন। যার বালাম নং ৩/১৯, ক্রমিক নং ১৯৭ এবং পৃষ্ঠা নং ৯৭। যা ওই বইটি উদ্ধার করে তদন্ত করলেই প্রতারণামূলক জালিয়াতি ও বাল্য বিয়ের বিষয়টি প্রমাণ হবে। কনের জন্ম নিবন্ধনের সনদ যাচাই করতে গিয়ে মুহুরি আহমদুর রহমান ভূঁইয়ার জন্ম সনদ জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। কনে যে মাদ্রাসার ছাত্রী ওই মাদ্রাসার জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশনে জন্ম তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ ইংরেজি অর্থাৎ কনের বয়স ১৭ বছর যা প্রচলিত আইনে বাল্য বিবাহ হিসেবে গণ্য হওয়ায় এটা দণ্ডনীয় একটি অপরাধ। ময়লা যুক্ত কাটাছেঁড়া জন্ম সনদে জন্ম তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০০২ দেখেই সন্দেহ হয়। জন্মসনদ যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, কনের যে ক্রমিক নাম্বারের জন্ম সনদটি দেখানো হয়েছে সেই নাম্বারের জন্ম সনদটি একজন পুরুষের নামে নিবন্ধিত রয়েছে। এখানে পুরুষের নাম এবং জন্ম সালটি মুছে দিয়ে ওই কনের নাম ও ভুয়া জন্মসাল বসানো হয়েছে। কাজীর মুহুরি আহমদুর রহমান ভূঁইয়া তাড়াহুড়ো করে জালিয়াতি করতে গিয়ে হয়তো কনের লিঙ্গ পরিবর্তনের কথা ভুলেই গেছেন তাই কনের ভুয়া জন্ম সনদে কনের লিঙ্গ পুরুষ ই রয়ে গেছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমানের সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে তিনি জানান – কনের পক্ষ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১৮ বছর বানিয়ে একটা জন্ম সনদ নিয়ে আসলেই এ বিয়ে রেজিষ্ট্রি হয়ে যাবে। সার্টিফিকেটে যে এখনও বয়স হয়নি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সার্টিফিকেটের বয়সে কিছু আসে যায় না। শুধু তাই নয়, কাজীর মুহুরি আহমদুর রহমান ভূঁইয়া শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজে ভাসমান এক সুন্দরী রমনীকে দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদ পাতে, পরে কৌশলে ওই প্রেমিককে আটক করে ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে অথবা ৪-৫ লাখ টাকা কাবিন রেজিষ্ট্রি করে ছেড়ে দেয়। পরে তালাকের নামে সালিশ করে ওই কাবিনের টাকা আদায় করে। লুৎফা নামের ওই ভাসমান নারীকে ৫-৬ টা বরের সাথে কাবিন করে কাবিনের টাকা আদায় করা হয়েছে। তাদের প্রতারণার শিকার লুৎফার সর্বশেষ স্বামী তাদের ফাঁদে পড়ে আটক ও বিয়ে হওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করে। পরে ওই লুৎফা চক্রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যা এখনো চলমান। কিছুদিন আগে একই ইউনিয়নের আরেকটি পরিবারের ছেলেকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কাবিন রেজিষ্ট্রি বালামে বরের জায়গায় স্বাক্ষর নিয়ে ওই পরিবারের কাছ থেকে আহমদুর রহমান ভূঁইয়া কাবিন বাতিলের নামে এক লাখ টাকা আদায় করছে বলেও বিশ্বাস্ত সূত্রে জানা গেছে। রাস্ট্র বিরোধী সংগঠনের শীর্ষ নেতা হয়ে এত অনিয়ম দূর্নীতি জালিয়াতি ও প্রতারণা করেও কিভাবে কাজী মুখলিছুর রহমান ও তার সহকারী আহমদুর রহমান ভূঁইয়া বহাল তবিয়তে রয়েছেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর উবাহাটা ইউনিয়নের কাজী মুখলিছুর রহমান সহ তার সহকারী আহমদুর রহমানের বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, জেলা রেজিষ্টার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর জালিয়াতির প্রমাণ সহ লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে।পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে সনদ জালিয়াতি সহ প্রতারণা মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।