ডি এসকে কামরুল, ঢাকা ঃ সপ্তাহের প্রথমদিন আজ রবিবার দেশের শেয়ার বাজারে ডিএসই ইনডেক্সে চাঙ্গাভাব থাকলেও অধিকাংশ শেয়ারের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। উত্থান বাজারে হটাৎ এমন দরপতনের কবলে পড়ে অধিকাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের দিনের বুলিশ ক্যান্ডেলকে অনুসরণ করে সকাল সাড়ে দশটায় ডিএসই ব্রড ইনডেক্সটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবনতায় শুরু হয়ে বেলা বাড়ার সাথে ইনডেক্সও বাড়তে থাকে।
বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ইনডেক্স ২০-৩০ পয়েন্ট পজিটিভ থেকে উঠানামা করছিলো। এসময় বাজারের সবকটি সেক্টরে স্বাভাবিক মিশ্রভাব বজায় থাকলেও অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে ইন্সুরেন্স ও ফিন্যান্স সেক্টর দর বৃদ্ধিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। বেলা সাড়ে বারোটার পর ইন্সুরেন্স ও ফিন্যান্স সেক্টরের বহরে যুক্ত হলো ব্যাংক সেক্টর। ব্যাংক সেক্টর ঘুরে দাড়ানোর সাথে সাথেই অন্যান্য সেক্টরে মুহুর্মুহু দর পতন ঘটে বাজারের চিরচেনা চিত্র পাল্টে গেল। ব্যাংক, ইন্সুরেন্স ও ফিন্যান্স সেক্টরের কাধে চড়ে ডিএসই ইনডেক্স বৃদ্ধি পেলো ৭০.৭৬ পয়েন্ট।এই ৭০ পয়েন্ট বৃদ্ধির আড়ালে অন্যান্য সেক্টরের শেয়ারে যে হারে দরপতন হয়েছে তা দেখলে মনে হচ্ছে যে আজ ১৫০ পয়েন্টের বেশি দরপতন ঘটেছে। নদীর যেমন এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে তেমনি শেয়ার বাজারে চলছে ভাঙ্গা গড়ার খেলা, এ যেনো এক পুজি হারানোর মেলা। বেশ কয়েকদিন ধরেই বাজার জটিল সমীকরণে চলছে, যে সমীকরণের সাথে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী কিছুতেই হিসেব মিলিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তারা যখন রাইট চিন্তা করে ট্রেড করছেন তখন বাজার মোড় নিচ্ছে লেফটে, যখন লেফটে চিন্তা করছেন তখন চলছে রাইটে। বাজারের এমন আচরণে ইনডেক্স টানা বৃদ্ধি পেলেও ডে ট্রেডিংয়ের সাথে যুক্ত অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ৪০%-৫০% পুজি হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। তারা না পারছেন অন্যান্য সেক্টরের শেয়ার স্টপ লসে সেল দিতে না পারছেন ব্যাংক, ফিন্যান্স, ইন্সুরেন্সে এন্ট্রি দিতে। যে কারণে বাজারের টার্নওভার দিনদিন কমে আসছে। ইনডেক্স বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেন কমে যাওয়া বাজারের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়। এক সেক্টর বাড়লে অন্য সেক্টরে যে দরপতন ঘটে তারল্য সংকটেই এমনটা হয়ে থাকে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা যখন এক সেক্টরের শেয়ার সেল দিয়ে অন্য সেক্টরের শেয়ার কিনতে আগ্রহী হন তখন যে সেক্টরের শেয়ার সেল দেন ওই সেক্টরে দরপতন ঘটে এবং যে সেক্টরের শেয়ার কিনেন ওই সেক্টরের দর বাড়ে।বাজারে যদি নতুন টাকা ঢুকতো তাহলে বাজার এমন আচরণ করতো না। বাজারে চাহিদার চেয়ে যোগান বাড়লেই দরপতন ঘটে থাকে। বাজারে যে তারল্য আছে তা দিয়ে ৩৩০+ কোম্পানির এই বিশাল বাজারের ভারসাম্য রক্ষা করাই যেখানে কঠিন সেখানে প্রতি মাসে নতুন নতুন কোম্পানি লিষ্টেড হয়ে পুরাতন কোম্পানির টাকা গুলো নতুন কোম্পানি গুলোতে ঢুকে সব কোম্পানি ই তারল্য সংকটে পড়ে সাপোর্ট হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় অনেক কোম্পানির দরপতনের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সাপোর্টেও কাজ করছে না। এদিকে বেশ কয়েকদিন যাবত বাজারে দর বাড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক, ইন্সুরেন্স ও ফিন্যান্স সেক্টরের দাপট দেখা যাচ্ছে। উল্লেখিত সেক্টর গুলোর দাপটে ইনডেক্স বাড়লেও অন্যান্য সেক্টরের বিনিয়োগকারীরা দরপতনের কবলে পড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ধারা চলতে থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাময়িক লাভবান হলেও অধিকাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। জুন ক্লোজিং কোম্পানি রেখে হটাৎ করে ব্যাংক, ফিন্যান্স ও ইন্সুরেন্স সেক্টর ঘুরে দাড়ানোর বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আসন্ন কুরবানী ঈদের পর চীনের ৯০০ কোটি টাকা বাজারে ঢুকবে এবং সেই টাকা তলানিতে পড়ে থাকা ফান্ডামেন্টাল শেয়ারে বিনিয়োগ হবে এমন গুজবেই এসব সেক্টরের শেয়ার দর হুহু করে বাড়ছে। গত কয়দিনে ব্যাংক সেক্টরের শেয়ার দর এমন ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ওই সেক্টরের আরএসআই ৮০.৮২ তে উঠে চীনা আসার আগেই ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া অন্যান্য সেক্টরের বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের লাগাম টেনে ধরতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কারণেও অন্যান্য সেক্টরের লো পেইড শেয়ার গুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মূলতঃ এসব কারণেই ব্যাংক, ইন্সুরেন্স ও ফিন্যান্স সেক্টরের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। তবে টার্নওভার যদি এই বিশাল বাজারের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারতো তাহলে এক সেক্টর বাড়লে অন্য সেক্টরে দরপতন ঘটার প্রবনতা থাকতো না। আস্থা ফিরিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক করতে ইনডেক্স বৃদ্ধির চেয়ে লেনদেন বৃদ্ধি জরুরী। অন্যতায় বাজারে এক সেক্টরে উত্থান অন্যান্য সেক্টরে পতন এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলতেই থাকবে।আজ ডিএসই ইনডেক্সটি ৭০.৭৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ক্লোজ হয়েছে ৫৫৩৮.৫১ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১৩০ টির, কমেছে ১৮৪ টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৩ টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর। বাজারের সর্বশেষ Rsi 70.33।