এম,এম,আর কামরুল :- সপ্তাহের চতুর্থদিন বুধবার দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ডিএসই ব্রড ইনডেক্সটি আগের দিনের চেয়ে ২৮.৯৭ পয়েন্ট হারিয়ে ক্লোজ হয়েছে ৪৪৮১.৭৯ পয়েন্টে। নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে দশটায় ডিএসই ব্রড ইনডেক্সটি ৪৫১০.৭৭ পয়েন্টে ওপেন হয়ে ঊর্ধমুখী প্রবনতায় লেনদেন হতে দেখা যায়। লেনদেনের প্রথম ঘন্টায় বেলা বাড়ার সাথে সাথে ইনডেক্সও বাড়তে থাকে। বেলা সাড়ে এগারোটার পর বিক্রয় চাপ বেড়ে গেলে ডিএসই ইনডেক্সটি তার অবস্থান থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে। বেলা ১ টার পর জোরেশোরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টা করলেও বিক্রয় চাপের কাছে হার মেনে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে নেগেটিভ রেখেই মার্কেট ক্লোজ হতে বাধ্য হয়েছে। সারাদিনের লেনদেনে চোখের পলকেই ইনডেক্সের ব্যাপক উত্থান পতন ছিল লক্ষ্যনীয়।

মুহুর্তেই দেখা যায় ২৫ পয়েন্ট পজিটিভ আবার পরক্ষণেই দেখা গেছে ১৫ পয়েন্ট নেগেটিভ! ইনডেক্সের উত্থান পতনে দিনভর এরকম অস্থিরতা দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিক্রয় চাপ যখনই বেড়ে ইনডেক্স নিচের দিকে নামতে শুরু করছে, তখনই কোনো একটা পক্ষ ক্রয় চাপ বাড়িয়ে ইনডেক্সকে সাপোর্ট দেয়ার চেস্টা করছে। পর্দার আড়াল থেকে কে বাজারের কলকাটি নাড়ছে সুনির্দিষ্ট ভাবে তা বলা না গেলেও “মুজিববর্ষ” উপলক্ষে সরকারের তরফ থেকে বাজারকে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে বলে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর মুখে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা ফিরে আসছে ফলে গত কয়েকদিন ধরেই ইনডেক্সের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়তে দেখা গেছে। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে বেশকিছু কোম্পানির দর উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত ডিএসই থেকে কোনো প্রকার কোয়ারির খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এটা বাজারের জন্য খুবই ভাল উদ্যোগ। যে কোম্পানি গুলোর দর বাড়ে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বাড়ার কারণেই নিজস্ব গতিতে দর বাড়ে কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার অজুহাতে কোয়ারির নামে কোম্পানির লাগাম টেনে ধরতে গিয়েই কারেকশনের নামে সার্বিক বাজারকে পতনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতে, দর বাড়ার অযুহাতে কোয়ারি দেয়া বন্ধ থাকলে কোম্পানি গুলো যেমন স্বাধীনভাবে নিজস্ব গতিতে চলতে পারবে তেমনি এসব কোম্পানির প্রভাব পড়ে সার্বিক বাজারও কোনো ম্যানুপুলেট সাপোর্ট ছাড়া স্বাধীনভাবে নিজস্ব গতিতে গতিশীল হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, কোয়ারি না দিলে কোম্পানি গুলোর দর টানা বৃদ্ধি পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে! তাই বলে একসাথে সব কোম্পানির দর ই কি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে? গত ১০ বছরের টানা পতনের বাজারে কি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার নেই? ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার গুলোতে কি ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছে না? একজন বিনিয়োগকারী জেনে বুঝে কোন্ শেয়ার কিনবে বা না কিনবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। কোয়ারির নামে স্বাধীন বাজারে কোম্পানির দরের উপর হস্তক্ষেপ করে লাগাম টেনে ধরার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। একটা একটা কোম্পানির লাগাম টেনে ধরতে গিয়েই তার নেতিবাচক প্রভাবে পুরো বাজারে লাগামহীনভাবে দরপতন ঘটে থাকে। কোয়ারি না দিলে গেম্বলিং হবে এমন অজুহাতও দেখানো হয়। গেম্বলিংও শেয়ার বাজারের একটি উপাদান। বিশ্বের প্রায় সব শেয়ার বাজারেই কমবেশি গেম্বলিং হয়ে থাকে। অনেক সময় গেম্বলিং ই শেয়ার বাজারকে গতিশীল করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আনে। তবে গেম্বলিংয়েরও বিভিন্ন ধরণ হয়, গেম্বলিং আর কারসাজি এক নয়। সিকিউরিটিজ রুল ভঙ্গ করে কেউ কারসাজি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া বাজার সংশ্লিষ্ট সবার যেমন কাম্য তেমনি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া শুধু দর বাড়ার অজুহাতে স্বাধীনবাজারে স্বাধীন বিনিয়োগকারীর শেয়ারের লাগাম টেনে ধরা কারো কাম্য নয়। এভাবেই বিনিয়োগকারীর আস্থা নড়বড়ে হয়।