আজ যা বাংলা ভাবে সারা বিশ্ব তা ভাববে আগামিকাল। কথাটা নতুন করে টের পাওয়া যায় এবারের বিশ্বমন্দার সময়। বিশ্বমন্দায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে গেল একটা গল্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাকি নতুন এক মারণাস্ত্র আবিস্কার করেছে। তাতে ভবন, রাস্তাঘাট ঠিক থাকে, খালি মানুষগুলোই উধাও হয়ে যায়। আর সেই মারণাস্ত্রের নাম শেয়ার বাজার।
বাংলাদেশ তো এই অস্ত্র আবিস্কার করে বসে আছে সেই ১৯৯৬ সালেই। সেই যে, ঘটি-বাটি বিক্রি করে সবাই মতিঝিলের রাস্তায় নেমে গিয়েছিল। তারপর কিভাবে হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্ব হারিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল তাও নিশ্চই সবার জানা। এরপর মনে হয় আর কাউকে বলে দিতে হবে না শেয়ার বাজার কী, বা কাকে বলে।
তারপরেও যারা জানেন না, তাদের একটু বুঝিয়ে বলি। শেয়ার বাজার হলো এমন এক বাজারে যেখানে প্রতিদিন সকালে দুই দল মানুষ মিলিত হয়। এর মধ্যে একদলের থাকে অর্থ, আরেকদলের অভিজ্ঞতা। দিন শেষে তারা কেবল নিজেদের সম্পদ হাতবদল করে। যাদের অর্থ ছিল তারা অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরে, আর অভিজ্ঞরা ফেরে অর্থ নিয়ে।
সুতরাং শেয়ার বাজারের প্রথম পাঠই হচ্ছে অর্থ আয় করতে হলে অভিজ্ঞ হতে হবে। জানেন তো, শেয়ার বাজারে তিন ধরণের বিনিয়োগকারী থাকে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বাজারের কিছুই জানেন না। ১০ শতাংশ আছেন যারা কিছুটা জানেন। আর ৮০ শতাংশ জানেন না যে তারা আসলে কিছুই জানেন না। সুতরাং আপনাকে কিছু জানার দলে থাকতে হবে।
জানতে যাওয়ার হ্যাপাও কম না। এক নব্য বিনিয়োগকারী ভাবলেন তাকে কিছু জানতে হবে। চলে গেলেন এক ব্রোকারের বাসায়। ড্রয়িং রুমে বসে আছেন ব্রোকার ভদ্রলোকের অপোয়, রুমে ঢুকলো ছয় বছরের এক ছেলে। তিনি কথা বলতে লাগলেন ছেলেটার সাথে।
-তোমার বাবা কৈ? কী করেন তিনি?
-আমার বাবা মাছ ধরে।
একটু খাবি খেলেন তিনি। অবাক হয়ে বললেন, মাছ ধরে?
ছেলেটা মাথা দুলিয়ে বললো, মাছই তো ধরে। বাবার কাছে আপনার মতো লোকজন আসে, চলে যাওয়ার পর আমার বাবা মাকে বলে, আরও একটা বড় মাছ ধরলাম। ভালই লাভ হবে।
সেই নব্য বিনিয়োগকারী ভদ্রলোক এই ব্রোকারের অপেক্ষায় আর ছিলেন কি না তা অবশ্য জানা যায় না। নিউইয়র্ক শহরে একবার চরম ঠান্ডা পড়েছিল। ওয়াল স্ট্রিটের এক নামকরা ব্রোকারকে সে সময়ে নিজের প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একবার হাঁটতে দেখা যায়। ঐ একবারই নাকি ব্রোকাররা নিজের পকেটে হাত দিয়েছিলেন, আর বাকি সময় তাদের হাত থাকে অন্যের পকেটে।
বাংলাদেশে অবশ্য সবাই যে হারে শেয়ার বাজারের দিকে ছুটছে তাতে অন্যের পকেটে হাত দেওয়া ব্রোকারের ইন্ধনের প্রয়োজন হচ্ছে না। যা কিছু আছে বিক্রি করে সহজে বড় লোক হওয়ার আশায় ভীড় করছে শেয়ার বাজারে। কাজ-কর্মে মন নাই, চোখ সারাণ স্টক মার্কেটের খবরের দিকে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট খুলে বসে থাকার লোকজন ক্রমশই বাড়ছে, তাও আবার জ্যামিতিক হারে। আর কেউ কেউ তো অফিসই করেন না।
বড় সাহেব অফিসের যেয়েই খবর দিলেন ক্যাশিয়ারকে। কিন্তু ক্যাশিয়ার সাহেব আর আসেন না। বার বার খবর দিয়েও পাওয়া গেল না। শেষে হাত কচলাতে কচলাতে অফিসের ম্যানেজার এসে জানালো, ক্যাশিয়ার অফিসে নেই, স্টক মার্কেটের দিকে গেছে। -স্টক মার্কেটে কেন?
-স্যার, তিনি তো তিন দিন ধরেই যাচ্ছেন, কিন্তু তাকে বলে দেওয়া হয়েছে যে আজই শেষ দিন।
-শেষ দিন কেন?
-না মানে, হিসাব মিলছে না তো, তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে শেয়ার বাজারে গেছে। আজও যদি টাকা নিয়ে এসে হিসাব মেলাতে না পারে তাহলে তো পুলিশকে খবর দিতেই হবে।
এই দেশটির মানুষের আয় কম। আয় আর ব্যয়ের হিসেব মেলে না। ফলে নানা ভাবে এই হিসেব মেলাতে হয়। আর এই হিসেব মিলানোর নতুন জায়গা হয়েছে শেয়ার বাজার।
যারা নিয়মিত হিসেব মিলাতে যান এবং শত ভয় দেখালেও বাজার ছেড়ে যাবেন না, তাদের জন্য আরও তিনটা শিক্ষা। আমি নিজে দিলে কেউ মানবে না। তাই বিখ্যাত তিনজনের তিনটা কথা বলা যায়।
উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ড নামের একজন মার্কিন ভদ্রলোক লিখেছিলেন, ‘ইনভেস্ট করার আগে ইনভেস্টিগেট করো’।
বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেট বাফেট বলেছেন, ‘আমি কখনো স্টক মার্কেট থেকে অর্থ কামানোর কথা ভাবি না। আমি সব সময় ভাবি, যে শেয়ারটা কিনবো সেটি পরেরদিনই বন্ধ হয়ে যাবে, আর এর পরের পাঁচ দিনেও লেনদেন হবে না।’
বার্নার্ড বারুখ নামের একজন মার্কিন বিনিয়োগকারী বলেছিলেন, ‘কখনো সর্বনিম্ন দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করো না, আর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রিও চেষ্টাও করো না।
ফোন 01625023459