টানা ৩ দিন বন্ধের পর আগামিকাল শুরু হতে যাচ্ছে শেয়ার বাজারের লেনদেন। গত ২ মাসের দর পতনে শেয়ার বাজারের অবস্থা অত্যন্ত করুণ।ব্যাপক পতনের কবলে পড়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদের অনেকেই প্রায় নিঃস্ব হয়ে হা হা কার করছেন।বাজার পতনের মূল ইস্যু হচ্ছে ব্যাংক এক্সপোজার লিমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ফলে প্রাতিষ্টানিক সেল প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে! এক্সপোজার লিমিট না বাড়ালে প্রাতিষ্টানিক বিনিয়োগকারীদের সেল প্রেসারে বাজার ধবংশ হয়ে যেতে পারে এই আশংকায় সাধারন বিনিয়োগকারী সহ বাজার কর্তৃপক্ষও ব্যাংক এক্সপোজার লিমিট বাড়িয়ে প্রাতিষ্টানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়ার দাবী তুলেছেন।বাংলাদেশ ব্যাংক ও এ দাবীর পক্ষে কিছুটা নমনীয় হয়েছে।হয়তঃ আজকালের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে একটা ব্যাখ্যা আসতে পারে।কিন্তু তাতে কি বাজার ভাল হয়ে যাবে! ধরে নিলাম ব্যাংক এক্সপোজার লিমিটের শুধু মেয়াদ বাড়ানো নয় একেবারে বাতিলই করে দেয়া হল! তাতে কি বাজার ভাল হয়ে যাবে? শুধু সাধারন বিনিয়োগকারী নয় স্বয়ং ডিএসইও ব্যাংক , মার্চেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তাদের সাথে বৈঠক করতে দেখেছি সেই সুযোগে মার্চেন্ট ব্যাংক গুলো তাদের বিভিন্ন দাবীও তোলে ধরেছেন! বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করতেছেন প্রাতিষ্টানিক বিনিয়োগকারীরা মাঠে নামলেই বাজার ভাল হয়ে যাবে।তবে আমার বিশ্লেষন বলছে ভিন্ন কথা।দেখুন গত ২ মাসে ব্যাংক এক্সপোজার লিমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পেনিকে থেমে থেমে ইনডেক্স ৬০০ পয়েন্ট পতন হয়েছে।যাদের লিমিটের অতিরিক্ত বিনিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাদের সেল প্রেসারে কি ?এই ৬০০ পয়েন্ট পতন হয়েছে? না, শুধু একদল পেনিকবাজ এক্সপোজার ইস্যু নিয়ে পেনিক ছড়িয়েছে ফলে পেনিক সেল দিচ্ছে সাধারন বিনিয়োগকারী আর পতনের সুযোগে বাই দিয়েছে প্রাতিষ্টানিক বিনিয়োগকারীরা।একসময় প্রাতিষ্টানিক বিনিয়োগকারীরা বাই দিলে বাজার আপ হত কিন্তু এখন প্রাতিষ্টানিক বিনিয়োগকারীরা পতনের সুযোগ নিয়ে পতনের মধ্যেই চুপি চুপি বাই দেয় তাই তাদের বাই প্রেসারে বাজার উঠে না। আইটেম সিলেক্টের জন্য এনালাইসিস করতে গিয়ে ডিএসইর ওয়েব সাইটে সেই তথ্যই দেখতে পেলাম।গত এক মাসে অনেক কোম্পানীর ইনষ্টিটিউট হোল্ডিং ১০০ থেকে ৫০০% পর্যন্ত বেড়ে গেছে পাশাপাশি পাবলিক হোল্ডিং সেই হারে কমেছে। যেমন একমাস আগে ড্রাগন সোয়েটারের ইনষ্টিটিউট হোল্ডিং ছিল ৪% পাবলিক হোল্ডিং ছিল ৫৫% পাবলিক শেয়ার সংখ্যা ছিল সাড়ে ৫ কোটি।বর্তমানে ওই কোম্পানীর ইনষ্টিটিউট শেয়ার বেড়ে ৪% এর স্থলে ২২% দেখা গেছে।পাবলিক হোল্ডিং ৫৫% এর স্থলে ৩৭% এবং পাবলিক শেয়ার সাড়ে ৫ কোটি এর স্থলে সাড়ে ৩ কোটি দেখা যায়। এসপিসিএল ইনষ্টিটিউট ৫.৫৪ % এর স্থলে গত এক মাসে বেড়ে হয়েছে ৮%, সিভিও ইনষ্টিটিউট ১৫.৭২ % এর স্থলে হয়েছে ১৭.০৩ %, ইবনেসিনা ইনষ্টিটিউট হোল্ডিং ছিল ৭.৪৯% তা বেড়ে বর্তমানে ১০.৭৮%, সাপোর্ট ইনষ্টিটিউট হোল্ডিং ছিল ১০.৬৩% বর্তমানে ১৩.৬৯%।এভাবে গত একমাসে শতাধিক কোম্পানীর ইনষ্টিটিউট হোল্ডিং বেড়েছে এবং পাবলিক হোল্ডিং কমেছে।অন্যদিকে যেসব শেয়ার অতি মূল্যায়িত সেই সব শেয়ারের কোনো কোনোটির ইনষ্টিটিউট হোল্ডিং কমেছে এবং পাবলিক হোল্ডিং বেড়েছে।এতে খুব সহজেই বোঝা যায় এক্সপোজার ইস্যুতে পেনিক দিয়ে বাজারে পতন ঘটিয়ে ভাল শেয়ার গুলো ইনষ্টিটিউট গুলো হাতিয়ে নিচ্ছে এবং কিছু কিছু অতি মূল্যায়িত শেয়ারে পরিকল্পিত উত্তান ঘটিয়ে ওই শেয়ার গুলো পাবলিকের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।পতন ঘটিয়ে চুপিসারে বাই দেয়া এবং উত্তান ঘটিয়ে চুপিসারে সেল দেয়ার প্রবনতা থেকে ইনষ্টিটিউট বেরিয়ে না আসলে প্রাতিষ্টানিক বিনিয়োগকারীরা হাজার হাজার কোটি টাকা বাজারে বিনিয়োগ করলেও বাজার স্বাভাবিক হবে না।পরিচালকদের যে বাই সেল নীতিমালা রয়েছে এবং পরিচালকরা যেভাবে ডিএসই ওয়েব সাইটে ঘোষনা দিয়ে বাই সেল করে ইনষ্টিটিউটের ক্ষেত্রেও এরকম নীতি মালা করা উচিৎ বলেই আমি মনে করছি।অন্যতায় পরিকল্পিত পতন ঘটিয়ে বাই দেয়া উত্তান ঘটিয়ে সেল দেয়ার প্রবনতা যত বাড়বে বাজার তত অস্থির হবে ফলে সাধারন বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে একদিন হারিয়ে যাবে।
E-Mail :- stockkamrul@gmail.com