ভালবাসা হল মানুষের জন্মগত স্বভাব।কখন যে কি ভাল লেগে যায় তা সে নিজেই জানে না।ভাল লাগা থেকেই ভালবাসা।ভালবাসা যত গভীর হয় ততই মধুর হয়।যত মধুর হয় ততই ছাড়তে কষ্ট হয়।মানুষ শুধু মানুষকেই নয়।দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত প্রিয় জিনিষটিকে নিজের মনের অজান্তেই ভালবেসে ফেলে।ওই ভালবাসা থেকে নিজের পোর্টপোলিওতে থাকা হাই রেটে কেনা আইটেমও বাদ যায়নি।আইটেম গুলো প্রতিদিন ট্রেডিং আওয়ারে কষ্ট দিচ্ছে,হতাশ করছে তবুও ছাড়তে কষ্ট হচ্ছে!এরই নাম ভালবাসা।অথচ শেয়ারের প্রতি এই অতি ভালবাসা-ই ডেকে আনবে সারা জীবনের সর্বনাশা।শেয়ার ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা শেয়ারকে ভালবেসে ওই শেয়ারের সাথে প্রেম করছেন।তাদের চোখে একমাত্র তাদের হোল্ডিং আইটেম ছাড়া মার্কেটে আর কোনো প্রফিটাবল আইটেম নেই।এটা হচ্ছে তাদের হোল্ডিং শেয়ারের প্রতি অতি ভালবাসা বা আত্ববিশ্বাস।আমাদের ভাষায় যেটাকে ইমোশনাল বলা হয়।এই অতি ভালবাসাই একদিন পোর্টপোলিওর সর্বনাশ করবে।এক আইটেম থেকেই ডাবল মুনাফা পাওয়ার আকাংখা থেকেই আইটেমের প্রতি ভালবাসা জন্মায়।দীর্ঘদিন প্রেম করার পর যেমন ঘটনা ক্রমে প্রেমিকা তার প্রেমিক থেকে ছুটতে পারেনা ঠিক তেমনি শেয়ারের সাথে বেশী দিন প্রেম করলে ঘটনাক্রমে আর সহজে বের হওয়া যায় না।শেয়ার বাজার উত্তান পতনের বাজার।এখানে একটি আইটেমেরমুভমেন্ট সব সময় এক রকম থাকে না।আজ যে আইটেমটি সবার কাছে প্রফিটাবল মনে হবে আগামীতে সেই আইটেমটি-ই সবার হতাশার কারন হতে পারে।মানুষের সাথে প্রেম করলে যেভাবে পকেট খালি হয় শেয়ারের সাথে প্রেম করলে পোর্টপোলিও খালি হয়।মনে করুন একটি শেয়ার গত কয়দিন যাবত দর বাড়তেছে।চারদিকে শুনা যাচ্ছে ওই শেয়ারটি ১০০ যাবে ৫০০ যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।অথবা আপনাকে কেউ একটি শেয়ারের গোপন সংবাদ দিল যে ওই শেয়ারটি এতদিনের ভিতর ১০০ যাবে।আপনি ইমোশনাল হয়ে অন্যান্য শেয়ার ছেড়ে দিয়ে ওই শেয়ারটি বাই দিলেন।বাই দেয়ার পর ২-৩দিনেই শেয়ারটি আপনার কেনা রেটের চেয়ে১৫-২০% বেড়ে গেলো।দর বাড়ার সাথে সাথে ওই শেয়ারটির প্রতি আপনার আত্ববিশ্বাস এবং ভালবাসা কয়েক গুন বেড়ে গেল।আপনি ভাবতে লাগলেন যেভাবে বাড়তেছে আসলেই শেয়ারটি ১০০ যাবে।এটা কিন্তু আপনার অতিরঞ্জিত আত্ববিশ্বাস এবং অতি ভালবাসা।আপনার কেনা দরের চেয়ে ১৫% বাড়ার পর একদিন সকালে ভাল থাকলেও বিকালে ৬% দর হারালো।আপনি ভাবলেন এটা স্বাভাবিক কারেকশন।তাই সেল দিলেন না।পরদিন সারাদিন শেয়ারটি উর্ধমুখী আপনি ভাবলেন।শেষদিকে নিশ্চিত হল্টেড হবে, সেল দিলে আর পাওয়া যাবে না! কিন্তু বিধিবাম! বেলা ২টার পর সেল প্রেসারে শেয়ারটি দিন শেষে ৫% দর হারিয়ে ক্লোজ হল।আপনি নিজেকে শান্তনা দিলেন আগামিকাল নিশ্চিত ঘুরে দাড়াবে।পরদিন আর আগের মত চাহিদা নেই তাই ওপেনিং প্রাইসেই ৪% দর হারিয়েছে।ভাবলেন দিন শেষে ঘুরে যাবে।না বরং ৮%দর হারিয়ে ক্লোজ হল পাশাপাশি ভলিওমও অনেক কমে গেল।কারন হচ্ছে আগের দিন সারাদিন উর্ধমুখী থেকে দিন শেষে ডাউন হওয়ায় শেয়ারটির আপট্রেন্ড শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে তাই গ্রেতাদের চাহিদাও কমে গেছে।ততক্ষনে আপনি ১৫%প্রফিট থেকে উল্টো ৫%লসে পড়ে গেছেন।এবার ভাবছেন আগামিকাল লস রিকভার হলেই সেল দিয়ে দিব।কিন্তু ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকায় শর্ট তার্ম ডাউন ট্রেন্ড থেকে ইন্টারমিডিয়েট ডাউনট্রেন্ডে চলে গেল।আপনার পোর্টপোলিওর ৩০% হারালো।এবার আপনি এত লসে সেলও দিতে পারছেন না,শেয়ারটিকে ভালবাসতেও পারতেছেন না।লসে পড়ে শুধু হাবুডুবু খাচ্ছেন।ফলাফল প্রফিটের ১৫% + পুজির ৩০% + সময় ২মাস= ২মাসে ৪৫% লস।ভালবাসার সময় অসময় আছে।মানুষ গৃহপালিত গরু ছাগলকেও ভালবাসে।কিন্তু যতদিন দুধ বা বাচ্চা দিবে ততদিনই মালিক ভালবাসবে।দুধ দেয়া বা বাচ্চা দেয়া শেষ হলেই হয়তঃ বিক্রি করে দিবে নতুবা জবাই করবে।এটা গরু ছাগলের প্রতি ভালবাসা দুধ বা বাচ্চার প্রফিটের কারনে।শেয়ারের প্রতিও ভালবাসা থাকা দরকার প্রফিট চলাকালীন সময়ে, লুজারের সময় নয়।আমার ইমেইলে বহু পোর্টপোলিও আছে যাদের ৭০%-৮০% লুজার।আর এই লুজারের মুল কারন হচ্ছে শেয়ারকে ভালবেসে স্টপ লস প্রয়োগ না করা।