শেয়ার বাজার এমন এক বাজার যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক জড়িত।শুধু আমরা ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী ই নয় আমাদের পরিবার,লিষ্টেড কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ এবং বাজার সংশ্লিষ্টরা এই বাজারে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত আর লিষ্টেড কোম্পানীর পন্য ব্যবহারকারীরা পরোক্ষভাবে জড়িত।অতএব বলা যায় একটি দেশের সকল নাগরিকই শেয়ার বাজারের সাথে জড়িত।এত গুরুত্বপূর্ন একটি বাজার অথচ এই বাজারকে ঘিরে গত ৫ বছর যাবত নেতিবাচক প্রচারনা চলছে।যা আমাদের বাজারকে আরো নেতিবাচক করে তুলছে।আর এই প্রচারনা বাহিরের কেউ নয়।না বোঝে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আমরাই বাজারকে দোষারোপ করে নেতিবাচক প্রচারনা চালিয়ে নিজেদের বিনিয়োগই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি।অর্থ্যাৎ নেতিবাচক প্রচারের কারনে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী আসতে সাহস পাচ্ছে না পাশাপাশি যারা ছিল তাদের অনেকেই পেনিক হয়ে বাজার ছেড়ে চলে গেছে।ফলে যোগানের তুলনায় চাহিদা বাড়ছে না,চাহিদা না বাড়লে বাজারে গতি ফিরে আসবে না।কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলেই যত ইচ্ছা কোম্পানী লিষ্টেড করে জোগান বাড়াতে পারে কিন্তু চাহিদা বাড়ানোটা সাধারন মানুষের আস্থার উপর।বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা যত ইতিবাচক প্রচার করবে ততই বাজারে বিনিয়োগ বাড়বে।কিন্তু এই ইতিবাচক প্রচারনাটা চালাবে কারা? যারা লুজার তারাতো কখনো নেতিবাচক ছাড়া ইতিবাচক কথা বলবে না।আর যারা গত ৫ বছরে ইনডেক্সের আচরনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে তারা গেইনার।যেহেতু গেইনাররা বাজারের চলমান আচরনের সাথে ট্রেডিংয়ের সমন্বয় করে গেইনার হয়েছে তারা চাইবে না মার্কেটের আচরনগত পরিবর্তন হোক।অতএব বোঝতেই পারছেন মার্কেট নিয়ে ইতিবাচক প্রচারনা না হলে সহজে গতিশীলও হবে না।যারা গত ৫ বছরের দীর্ঘ পতনে ট্রেড করেও মার্কেটের ট্রেন্ড ট্রেন্ড লাইন এবং চ্যানেল শিখে নাই তারা সহজে উদ্বার হতে পারবে না বরং ঝুলেই থাকবে।ঢাকা-রাজশাহীর ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত লাইন দিয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবে আবার ঢাকা ফিরে আসতেই হবে।কারন এটা ট্রেনের নির্ধারিত সিডিউল। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক সৃষ্টিরই নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরী করে নির্ধারিত পথে যার যার আপন গতিতে চলার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।যার ফলে প্রত্যেকটা সৃষ্টি নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত পথে আপন গতিতে চলছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।যেমন চন্দ্র-সূর্য্য, গ্রহ-নক্ষত্র, দিন-রাত সবকিছুই তাদের নির্দিষ্ট নীতিমালায় নির্ধারিত পথে যার যার কাজ করছে।অর্থ্যাৎ নির্ধারিত সময়ে সূর্য্য পূর্বদিকে উঠছে আবার পশ্চিম দিকে অস্ত যাচ্ছে।সূর্য্য যখন উঠে তখন দিনের আগমন ঘটে রাতের প্রস্থান হয় আবার সূর্য্য যখন অস্ত যায় তখন রাতের আগমন ঘটে দিনের প্রস্থান হয়।এটা চিরন্তন সত্য এবং চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্রের দৈননদিন সিডিউল।ছাত্র শিক্ষকদের ভাষায় এটাকে রুটিন বলা হয়।স্টক মার্কেটের ভাষায় এটাকে ট্রেন্ড,ট্রেন্ড লাইন বা চ্যানেল বলা হয়।সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টিকর্তা একমাত্র মানুষকেই অপরিসীমমেধা দান করেছেন।সেই মেধাকে কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন কাজ কর্মের জন্য মানুষ তথা বৈজ্ঞানিকরাও আমাদের চাহিদা মিটানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই তৈরী করেছেন।প্রত্যেকটা জিনিষই বাজারজাত করার সময় প্রস্তুতকারক জিনিষটির সাথে একটা ইউজার গাইড দিয়ে থাকেন।ব্যবহারকারী যদি ইউজার গাইডের নির্দেশনা মত জিনিষটি ব্যবহার করেন তাহলে তার জিনিষটি সঠিক ভাবে কাজ করবে কিন্তু ব্যবহারকারী যদি নির্দিষ্ট নীতিমালা তথা ইউজার গাইডের নির্দেশনা অনুজায়ী ব্যবহার না করে তাহলে হিতেবিপরীত হতে পারে।যে পাজেরো গাড়ি চালাতে জানেনা সে যদি পাজেরো চালিয়ে গন্তব্যে যেতে চায় তাহলে সে নিজে মরবে,সাথে যে থাকবে তাকে মারবে,যাকে ধাক্কা দিবে তাকেও মারবে এবং পাজেরো গাড়িটিকেও ধুমরে মুচরে দিবে।এত বড় দুর্ঘটনার কি পাজেরো গাড়ির জন্য হয়েছে? নিশ্চই না।এটা ড্রাইভিং না জানার কারনে হয়েছে। শেয়ার বাজারের রুপরেখা যিনি তৈরী করেছেন তিনি আপ ডাউনের সিডিউল সংযোজন করেই তৈরী করেছেন।কারা,কখন,কিভাবে এই বাজারে বিনিয়োগ করবে সেই ইউজার গাইডও চিত্র সহ দিয়েছেন।এনালাইসিসের প্রোগরামে ট্রেন্ড,ট্রেন্ডলাইন,চ্যানেল,আপট্রেন্ড,ডাউনট্রেন্ড,সাডওয়ে ইত্তাদি শেয়ার বাজারে কিভাবে কখন কি করবে সেই ইউজার গাইডেরই প্রমান।এমতাবস্থায় কেউ যদি ইউজার গাইডের সঠিক নির্দেশনা প্রয়োগ না করে মনগড়া ট্রেড করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বাজারের কি দোষ! গত ৫ বছরে পতন মার্কেটের সাথে যারা নিজের ট্রেড সিষ্টেম মানিয়ে নিতে পারেনি তারা আর পারবেও না।কথায় আছে না! যার হয় না সাতে তার হবে না সাতাইশে! এই পতন মার্কেট গত ৫ বছরে আমাদের যা শিখিয়েছে হয়ত ১০ বছর মার্কেট আপ থাকলেও তা শিখতে পারতাম না।কারন অভিজ্ঞতাই হল সর্ব শ্রেষ্ট শিক্ষক।আর ডাউন মার্কেটের অভিজ্ঞতা ডাউন মার্কেটের জন্যই বেশী উপযোগী।অতএব মার্কেটের বিনিয়োগের ইউজার গাইডের নির্দেশনা আগে শিখুন তারপর বিনিয়োগ করুন প্রফিট আপনার দরজায় এসে নক করবে।না বোঝে বিনিয়োগ করবেন লস আর হতাশা আপনার পিছু ছাড়বে না।যেমন আপট্রেন্ড আইটেম ডাউন মার্কেটেও প্রফিট দেয় এবং ডাউন ট্রেন্ড আইটেম আপ মার্কেটেও লস দেয়। আইটেম শুধু গ্রীন কালার থাকলেই আপট্রেন্ড সিগন্যাল দেয় না।অধিকাংশ গ্রীন আইটেমও ডাউন ট্রেন্ড সিগন্যাল দেয়।কিন্তু অনেকেই সিগন্যাল না বোঝার কারনে গত দিনের চেয়ে আপ এবং গ্রীন কালার দেখলেই ডাউনট্রেন্ডে থাকা আইটেমকেও মনে করে আপট্রেন।আপট্রেন্ড ডাউনট্রেন্ড আইটেমই যদি সিলেকশন করতে না পারে তাহলে প্রফিট করবে কেমনে।অতএব বাজারের নেতিবাচক প্রচারনা বন্দ্ব করে মানুষকে বাজারের প্রতি আকৃষ্ট করুন তাতে বিনিয়োগ বাড়বে,বাজার গতিশীল হবে ফলে নিজেও বাচবেন অন্যরাও বেচে যাবে।