তুলা রপ্তানিকারকদের
আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল
কটন অ্যাসোসিয়েশন (আইসিএ)
কালো তালিকাভুক্ত করেছে
বাংলাদেশের ৯৪ কোম্পানিকে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৭
কোম্পানিও আছে।
আইসিএর সাথে করা চুক্তি লংঘন
করায় তাদেরকে এ তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট
সূত্রে জানা গেছে। এ
তালিকাভুক্তির কারণে
কোম্পানিগুলো নিজেরা সরাসরি
তুলা আমদানি করতে পারবে না।
ফলে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হতে
পারে। আইসিএ সূত্রে এ তথ্য জানা
গেছে।
সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে
কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালে
আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম
অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ওই
সময় মাত্র ৭০ থেকে ৯০ সেন্টের
মধ্যে থাকা তুলার দাম বেড়ে ২
ডলার ছাড়িয়ে যায়। সামনে আরও
দাম বাড়তে পারে এমন গুজব ছড়ায়
আইসিএ কর্তৃপক্ষ। এ আশঙ্কা থেকে
বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি
আগাম তুলা কিনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি)
করে অনেক কোম্পানি। কিছু দিনের
মধ্যে বাজারের গতিধারা পুরো
বিপরীত দিকে মোড় নেয়।এবার দাম
ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। এতে
অনেক কোম্পানি তুলা কেনার জন্য
দেওয়া তাদের আদেশ বাতিল করে।
আদেশ বাতিল করায়
কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করে
আইসিএ। জরিমানা না দেওয়ায়
সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে
কালো তালিকাভুক্ত করে
আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের
বার্ষিক তুলার চাহিদা প্রায় ৪২
লাখ বেল। এর মধ্যে আমদানী করতে
হয় প্রায় ৪০ লাখ বেল। আইসিএ
হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে ১২
বিলিয়ন ডলারের তুলা বাণিজ্য হয়।
এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই হয় ২
বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশ
ছাড়াও প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি দেশে
তারা তুলার বাণিজ্য করে।
আইসিএ সূত্র অনুযায়ী, ১৯৯৬ সাল
থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত
বাংলাদেশের প্রায় ৯৪টি
কোম্পানি কালো তালিকাভুক্ত
হয়েছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত এই
তালিকায় ছিল ৫৭টি কোম্পানি।
আর ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত
প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায়
৯৪টিতে।
আইসিএর কালো তালিকায় থাকা
পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলো
হলো- আলহাজ্ব টেক্সটাইল, সিএমসি
কামাল টেক্সটাইল, মেট্রো
স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং,
সোনারগাঁও টেক্সটাইল, তাল্লু
স্পিনিং ও জাহিন স্পিনিং মিলস
লিমিটেড।
২০১১ সালে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায়
উচ্চমূল্যে আগাম বুকিং দেয় বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠান। সে সময় বাংলাদেশী
প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এক
লাখ ৫০ হাজার টনেরও বেশি তুলার
ক্রয়াদেশ পায় আইসিএ সদস্যভুক্ত কিছু
প্রতিষ্ঠান। অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে
ঋণপত্র দিতে রাজি হয়নি
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কারণ
সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধিকে
আমলে নেয় ব্যাংক। ফলে অনেকেই
তুলা আমদানিতে ব্যর্থ হয়। কিছু
প্রতিষ্ঠান চুক্তি অনুযায়ী আমদানি
করতে বাধ্য হয়। এতে লোকসানে
পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষতির
পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ হাজার
কোটি টাকা বলে জানায়
বিটিএমএ।
এ বিষেয় যোগাযোগ করা হলে
জাহিন স্পিনিং লিমিটেডের
পরিচালক মাহমুদুর রহমান অর্থসূচককে
বলেন, আন্তর্জাতিক কটন
অ্যাসোসিয়েশন (আইসিএ) ইউরোপের
একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি তাদের
স্বার্থে তারা করেছে। তারা
তাদের মতো গুজব ছড়িয়ে তুলার দাম
বাড়ায় আবার কমায়।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে এমন একটি
কাজ করেছে তারা। তাদের ফাঁদে
পা রেখে আমরা ধরা খেয়েছি।
আমাদের অনেকে আইসিএর বিরুদ্ধে
মামলা করেছে। এ তালিকায়
পড়লেও আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যে
কোনো ক্ষতি হবে না।
এ বিষেয় ম্যাকসন্স গ্রুপের নির্বাহী
পরিচালক মহসিন আদনান অর্থসূচককে
বলেন, আইসিএর মামলায় আমাদের
কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কারণ আমরা শুধু আইসিএ তালিকাভুক্ত
কোম্পানি থেকেই তুলা কিনি না।
এর বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে।
যারা টেক্সটাইলের কাঁচামাল
বিক্রি করে। আমরা সেখান থেকে
নিচ্ছি।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস
অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহ-
সভাপতি ফজলুল হক অর্থসূচককে বলেন,
কালো তালিকা করার আগে
আইসিএর পক্ষ থেকে আমাদেরকে
জানানো হয়। অনেকে সুনাম রক্ষার
স্বার্থে জরিমানা দিয়ে কালো
তালিকা বা ডিফল্টার থেকে নাম
বাদ দেয়। যারা জরিমানা দেয় না
তারা এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়।
তিনি বলেন, এই তালিকায় থাকা
কোম্পানিগুলো আইসিএ সদস্যদের
কাছে থেকে মাল কিনতে পারে
না। তবে এর বাইরে থাকা যে
কোনো কোম্পানি থেকে তারা
মাল কিনতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফজলুল হক বলেন,
আমরা বরাবরই আইসিএকে নমনীয় হতে
অনুরোধ জানালেও তাতে সাড়া
পাওয়া যায় না। এই তালিকার ফলে
পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে এর কোনো
প্রভাব পড়বে না। তবে তালিকাভুক্ত
কোম্পানিগুলোতে এর প্রভাব পড়বে।
কারণ এর ফলে তাদেরকে অনেক সময়
বেশি মূল্যে কাঁচামাল কিনতে হয়। তথ্য সূত্রঃ- অর্থসূচক