এম,এম,আর কামরুল :- সপ্তাহের প্রথমদিন দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বড় পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। রবিবার নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে দশটায় ডিএসই এক্স ইনডেক্সটি ৪৩৮৪.৫ পয়েন্টে লেনদেন শুরু হয়ে দু’মিনিটে ৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে দিনের সর্বোচ্চ ৪৩৯৩.৭৮ পয়েন্টে উঠে।

লেনদেনের দশ মিনিটের মধ্যেই ইনডেক্সটি ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক অবস্থায় রূপ নেয়। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ইনডেক্স পড়তে থাকে। বেলা যত বাড়ছে উপর্যুপরি সেল প্রেশারে ইনডেক্স তত পড়ছে। ইনডেক্স যত পড়ছে দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা তত বাড়ছে। দিনভর নেতিবাচক প্রবনতায় লেনদেন হয়ে একপর্যায়ে আগের দিনের চেয়ে ৯৭.১০ পয়েন্ট হারিয়ে ডিএসই এক্স ইনডেক্সটি ক্লোজ হয়েছে ৪২৮৭.৩৮ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪২ টি, কমেছে ৩০২ টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫ টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর। ডিএসই এক্স ইনডেক্সটির টেকনিক্যাল চার্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলমান পতনের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এর আগে নভেম্বর মাস মার্কেট সাইডওয়েতে ঘুরপাক খাচ্ছিল। সাইডওয়ে থেকে বাজার আপট্রেন্ড বা ডাউনট্রেন্ড যেদিকেই মুভমেন্ট করুক বড় ধরনের মুভমেন্ট নিবে এটাই টেকনিক্যাল বিশ্লেষকদের ধারণা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাইডওয়ে থেকে যখন বেরিয়ে ডাউনট্রেন্ড তৈরি করলো তখন বড় ধরনের ডাউনট্রেন্ডের আভাস দিচ্ছিলো। চার্টের সেই পূর্বাভাস অনুযায়ী ডিসেম্বরে শুরু হওয়া পতন মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আচমকা পতনের কবলে পড়ে বিনিয়োগকারীরা যখন দিশেহারা তখন সরকারি তরফ থেকে ইতিবাচক নিউজ দিয়ে বাজারকে সাপোর্ট দেয়া হল। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্টে বাজার ঘুরে দাঁড়ালো। টেকনিক্যাল সাপোর্ট লেভেলে না এসে মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্টে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে তখনকার উত্থান ছিল ক্ষনিকের। তাই এক সপ্তাহের বেশি উত্থান প্রবনতা ধরে রাখতে পারেনি। ফলে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসে ইনডেক্সটি আবার সাইডওয়েতে ঘুরুপাক খেতে দেখা যায়। সাইডওয়ে থেকে যখন আবার ডাউনট্রেন্ড তৈরি করতে শুরু করেছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আবারও বাজারের ইতিবাচক নিউজ প্রকাশ পায়। ইতিবাচক নিউজ আসার সাথে সাথে সাইডলাইনে হাত গুটিয়ে থাকা বিনিয়োগকারীরা হুমরি খেয়ে মার্কেটে পড়ে। মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্টে মার্কেট ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি লেনদেন হাজার কোটি স্পর্শ করে। এই মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্টের সাময়িক উত্থান ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কারেকশনের নামে বাজারে যে পতন শুরু হয়েছিল ৯৭.১০ পয়েন্ট হারিয়ে আজ সেই কারেকশন ভয়াবহ পতনে রূপ নিয়েছে। ইতিবাচক নিউজ দেখে বিনিয়োগকারীরা আশা নিয়ে বাজারমুখী হয়ে যখন পুঁজি হারিয়ে নিরাশ হয় তখন আস্থাহীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কোনো ইতিবাচক নিউজেও আর মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট পায় না। তাছাড়া বর্তমানে করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে বিশ্বের শেয়ার বাজার যেখানে নিন্মমুখী সেখানে আমাদের দেশীয় শেয়ার বাজারেও কিছু না কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক নয়। উত্থান পতন শেয়ার বাজারের চিরাচরিত নিয়ম। বাজার যত নেতিবাচকই থাকুক না কেন, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে বাজার ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে। অঝথা জোর করে ঘুরানোর চেস্টা না করে টেকনিক্যাল সাপোর্ট লেভেলে এসে নিজস্ব শক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষা করা উচিৎ। অন্যথায় মনস্তাত্ত্বিক নিউজের সাপোর্টে উঠাতে চাইলে এভাবেই ক্ষনিকের উত্থান হয়ে পুনরায় বড় পতনে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।